হারাম। ১. প্রেম ভালোবাসা হয় – একজন
আরেকজনের সাথে সরাসরি/ফোনে/
ফেইসবুকে কথা বলে, দেখাসাক্ষাৎ করে।
ইসলাম এইধরণের দেখা সাক্ষাত ও কথা বলা,
যেখানে কামনা-বাসনা মিশ্রিত থাকে
সেটাকে “যিনা” সাব্যস্ত করে হারাম করে
দিয়েছে।
যিনা কি? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া
চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা
জিহ্বার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ
করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে
হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা
শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা
ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর
লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ
রেখে দেয়”। সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-
মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-
নাসায়ী।
সমস্ত প্রকার যিনা হারামঃ আল্লাহ
তাআ’লা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে
বলেনঃ “তোমরা যিনার কাছেও যাবে না।
কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ
কাজ”। সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩২। রসূলুল্লাহ্
(সাঃ) বলেছেনঃ “কোন পুরুষ যখন একজন
মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হয়, তখন
তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।” তিরমিযী,
মিশকাত। ২. বেগানা নারীকে স্পর্শ করা
কতো বড়ো পাপ!! “নিশ্চয়ই তোমাদের কারো
মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ
মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে
তার জন্য হালাল নয়।” তাবারানী, ছহীহুল
জামে হাদীস -৪৯২১। ৩. আর এইরকম সম্পর্কের
একটা পর্যায়ে (আগে হোক বা পরে) নারী
পুরুষে যিনা-ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে।
অবিবাহিত জেনাকারী ও জেনাকারিনীদের
দুনিয়াবী শাস্তিঃ “ব্যভিচারিণী নারী
ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ করে
বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর
কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে
দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর
প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক।
মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি
প্রত্যক্ষ করে”। সুরা আন-নূর, আয়াত ২। দুনিয়ার
জীবনে বিবাহিত জেনাকারীদের চেয়ে
অবিবাহিত জেনাকারীদের শাস্তি কম করা
হয়েছে। কিন্তু তোওবা করে ফিরে না আসলে
পরকালে দুই দলের জন্যই রয়েছে কঠোর
শাস্তি।
তাদের উলংগ করে বড় একটা কড়াইয়ে
পুড়ানো হবে। কিছুক্ষণ পরপর সেই আগুনের
মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হবে, আর
জেনাকারীরা ছিটকে বের হয়ে আসতে
চাইবে আগুন থেকে। কিন্তু তারা পালিয়ে
যেতে পারবেনা, আবার তাদেরকে আগুনের
মধ্যখানে নিয়ে আবার পুড়ানো হবে।
জেনাকারী নারীর লজ্জাস্থানের দূর্গন্ধে
পুরো জাহান্নামবাসীর জীবন অতিষ্ট হয়ে
যাবে। সেটা তাদের জন্য অতিরিক্ত আরেকটা
শাস্তি হবে। (নাউযুবিল্লাহ) জেনাকারী ও
জেনাকারীদের তোওবা করাই উচিত।
অবিবাহিত জেনাকারী ও জেনাকারিনীদের
দুনিয়াবী শাস্তিঃ বিবাহিত নারী বা পুরুষ
যদি জিনার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, আর তা
ইসলামী বিচারালয়ে প্রমানিত হয় অথবা সে
চারবার নিজে থেকেই স্বীকারোক্তি দেয়
(শাস্তি মাথে পেতে নেওয়ার জন্য) – (২টার
যেকোনো একটা হলেই শাস্তি প্রযোজ্য হবে)
তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে তাকে “রজম” বা
পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হবেঃ জাবির বিন
আব্দুল্লাহ আল আনসারি (রাঃ) হতে বর্ণিত:
বনি আসলাম গোত্রের এক লোক রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) এর কাছে এসে জানালো যে সে
জিনা করেছে এবং নিজের বিরূদ্ধে চার বার
সাক্ষ্য দিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে “রজম”
বা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর নির্দেশ দিলেন, কারণ
সে বিবাহিত ছিল। সহীহ বুখারি ভলিউম ৮, বুক
৮২, নম্বর ৮০৫।
রজম প্রয়োগের এই ঘটনাটি বুখারির ৮টা,
মুসলিমের ৯টা, আবু দাউদের ৪টা, মুয়াত্তা
ইমাম মালিকের ২ টা সহ মোট ২৩ টা সহীহ
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বিঃদ্রঃ
জেনাকারী নারী বা পুরুষের এমন ধারণা
পোষণ করা মোটেই ঠিকনা, আমাদের দেশে
এই নিয়ম নাই – তাই আপাতত কিছু আনন্দ করে
নেয়া যাক। দুনিয়াতে শাস্তি না হলে
পরকালের শাস্তি আরো ভয়ংকর।
জাহান্নামের আগুনের কড়াইয়ে পুড়া কি
ভয়ংকর হতে পারে? ৫ মিনিট চুলার আগুনে
ছোট্ট একটা আঙ্গুল দিয়েই দেখতে পারেন
সহ্য করতে পারেন কিনা? কি কঠিন অবস্থা
হবে আগুনের কড়াইয়ে যখন উলংগ করে
পুড়ানো হবে যার আগুন দুনিয়ার আগুনের ৭০ গুণ
আর যেই আগুন কখনো কমবেনা, না শাস্তি
কমানো হবে! (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
যিনাকারীদের পরকালীন শাস্তিঃ রাসুল
(সাঃ) বলেছেনঃ “আমি স্বপ্নে একটি চুলা
দেখতে পেলাম যার উপরের অংশ ছিল চাপা
আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে
আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভিতরে নারী পুরুষরা
চিল্লাচিল্লি করছিল।
আগুনের শিখা উপরে আসলে তারা উপরে
উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে
যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল,
আমি জিবরীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? জিবরীল
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললঃ তারা হল, অবৈধ
যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ। সহীহ আল-
বুখারী। কথিত প্রেমিক আর প্রেমিকাদের
একে অন্যের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা
উচিত। পরকালে ভালোবাসা নামক
শোয়তানী ধোঁকা থাকবেনা – শুধুই আগুন।
আল্লাহর কসম! তখন এই প্রেমিক প্রেমিকারা
একজন আরেকজনের শত্রু হয়ে যায়।
আর দুনিয়ার জীবনে একজন আরেকজনকে
জেনা ব্যভিচারে বন্ধু হিসাবে নেওয়ার জন্য
হাত কামড়িয়ে আফসোস করবে। “জালেম
সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে
বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের পথ
অবলম্বন করতাম। হায় আমার দূর্ভাগ্য! আমি
যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে না নিতাম। আমার
কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা
থেকে পথভ্রষ্ট করেছিল”। সুরা আল-ফুরকান,
আয়াত ২৭-২৯। আল্লাহ আমাদের ও আমাদের
পরিবারকে নিরাপদ রাখুন, আমিন।
5 years ago ( May 30, 2017 )
| 167 views |